
সিসিক নির্বাচন : ১৮ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ভাগ চায় জামায়াত

সিলেটের জমিন ডেস্ক
২০২৩-০৫-৩১ ০৩:০৩:৩৪ / Print

সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপির মতো জামায়াতে ইসলামীও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে কাউন্সিলর পদে সিলেট সিটিতে তৎপর দলটির সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীরা। সিলেট সিটি নির্বাচনে জামায়াতের সবচেয়ে বেশি প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে কাউন্সিলর পদে জামায়াতের প্রার্থী ২০ জন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া জামায়াত নেতারা বলছেন, কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ জন্য দল থেকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে না, আবার বাধাও দেওয়া হচ্ছে না। তবে জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারাও একই সুরে কথা বলছেন। তাঁরাও বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলের পক্ষে কাউকে প্রার্থী হতে উৎসাহ দেওয়া হয়নি, আবার নিরুৎসাহিতও করা হয়নি। তবে মেয়র পদে নির্বাচন করার ব্যাপারে দলীয় বিধিনিষেধ আছে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা এ সরকারের অধীন নির্বাচনে যাব না, এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত। স্থানীয়ভাবে কেউ হয়তো কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের সম্মতি ছাড়াই। তাঁরা আবার এমন পর্যায়ের নন যে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ জন্য আমরা বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।’
জানা যায়, সিলেট সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের ১৯টিতেই সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতের ২০ নেতা-কর্মী ও সমর্থক। সম্ভাব্য এসব প্রার্থী দলটির কোনো পদে নেই। সবাই জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা-কর্মী। ‘হয়রানি’ এড়াতে ও নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার কৌশল হিসেবে তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখছেন। যদিও স্থানীয়ভাবে অনেকেই জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম-পরিচয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯টিতেই জামায়াতপন্থী প্রার্থীরা তৎপর। এর মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডে জামায়াতের ১৮ জন কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে, ২, ৭, ৮, ১০, ১২, ১৮, ১৯, ২৪, ২৭, ২৮, ৩০, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৭, ৩৮, ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে। এর বাইরে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল মুহিত জাবেদ ও তানিম খাঁন জামায়াতের দুজন প্রার্থী মাঠে আছেন।
গতবারের সিটি নির্বাচনে সিলেটে ২৭টি ওয়ার্ড ছিল। এবার সিটি করপোরেশনের সীমানা বাড়িয়ে নতুন আরও ১৫টি ওয়ার্ড যুক্ত করা হয়েছে। বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯টি ওয়ার্ডেই জামায়াতের প্রার্থী আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, জামায়াতের যেসব সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে তৎপর আছেন, তাঁদের মধ্যে বর্তমান কাউন্সিলর আছেন তিনজন। যদিও তাঁদের মধ্যে দুজন গত নির্বাচনে জয় পাওয়ার পরই আওয়ামীপন্থী কাউন্সিলরদের সঙ্গে মিশে গিয়ে পুরোনো দলীয় পরিচয় অনেকটা ‘আড়াল’ করে রেখেছেন। তাঁরা তিনজনই শিবিরের সাবেক নেতা।
আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, দুটি আশঙ্কা থেকে জামায়াতের প্রার্থীরা রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখছেন। প্রথমত পুলিশের অযথা হয়রানি, দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ পেলে দল মতনির্বিশেষে ভোট পেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, সংসদ সদস্য বা মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়। ওই সব নির্বাচনে তাঁরা অংশ নিচ্ছেন না। বর্তমান সরকারের অধীনে এসব নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা অটল আছেন। কাউন্সিলরসহ অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনে যদি দলের কেউ অংশ নেন, সেটি তাঁর বা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। তাঁদের সমর্থনে দলীয়ভাবে যেমন প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় না, তেমনি তাঁদের বাধাও দেওয়া হয় না।
জানা যায়, ২০১৮ সালের সিসিক নির্বাচনে দলের মহানগর শাখার তৎকালীন আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে মেয়র পদে প্রার্থী করেছিলো জামায়াত। জোটসঙ্গী জামায়াতকে ছাড়াই সেবার মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট সিটি নির্বাচনকে ঘিরেই বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এরপর নানা ইস্যুতে দূরত্ব বাড়তে বাড়তে অঘোষিতভাবে ভেঙেই গেছে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। সর্বশেষ নির্বাচনে মেয়র পদে আরিফুল হক যেখানে প্রায় এক লাখ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন সেখানে মাত্র ১১ হাজার ভোট পেয়ে জামায়েতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আর ২১ জুন ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।
সিলেটের জমিন/বুধবার, ৩১ মে ২০২৩

এ জাতীয় আরো খবর

