
অস্বস্তিতে স্বল্প আয়ের মানুষ

সিলেটের জমিন ডেস্ক রিপোর্ট
২০২৩-০৫-৩১ ০৯:৩৯:১১ / Print

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এখন একটি আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা শুনলেও মানুষ ততটা ভয় পায় না যতটা এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ে পাচ্ছে। দিন দিন খাদ্য দ্রব্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো হচ্ছে- খাদ্য, বস্ত্র , বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা।
যার মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য প্রধান ও অন্যতম হলো খাদ্য। যে খাবার দুবেলা দুমুঠো খেয়ে মানুষ জীবনধারন করে তার দাম দিন দিন মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যগুলো হলো- চাল, ডাল , আটা, ভোজ্য তেল, আলু , পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চিনি, সবজি, মাছ ও মাংস ইত্যাদি।
করোনা মহামারি এবং তার মধ্যেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সবকিছু মিলিয়েই প্রতিটি দেশ আজ একটি বিশৃংখল, অস্থির ও হতাশাজনক অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে।
আর বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। আপাতদৃষ্টিতে যদিও মনে হয় যুদ্ধ ও করোনা এই অবস্থার জন্য দায়ী, তথাপি বিভিন্ন সিন্ডিকেট যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তারা কম দায়ী নয়। এর মধ্যে রয়েছে- উৎপাদক, আমদানিকারক, পাইকারী বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতা । কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বর্তমান খুচরা বাজার মূল্য নিচে উল্লেখ করা হলো-
দ্রব্যসমূহ
খুচরা বাজারমূল্য ( প্রতি কেজি)
মোটা চাল
৬০/=
চিকন ডাল
১৬০/=
মোটা ডাল
১০০/=
খোলা আটা
৫৫-৬০/=
প্যাকেটজাত আটা
৬৮/=
বোতলজাত সয়াবিন তেল
২০০/=
খোলা সয়াবিন তেল
১৮০/=
চিনি
১৪০/=
ডিম
১৫০/= ( এক ডজন)
পেঁয়াজ
৭৫-৮০/=
আদা
৪০০/=
রসুন
১৮০/=
আলু
৪০-৪৫/=
গরুর মাংস
৭৫০-৮০০/=
খাসির মাংস
১১০০-১২০০/=
ব্রয়লার মুরগী
২০০-২৫০/=
সোনালি মুরগী
৩৫০-৩৭০/=
লেয়ার মুরগী
৩৮০-৪০০/=
এছাড়া রাজধানীর বাজারে সবজি ও মাছের দাম এখন দিগুণেরও বেশি।
কোনো খাদ্য দ্রব্য আর দরিদ্র মানুষের নাগালের মধ্যে নেই।
আমরা যদি এখানে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের উদাহরন টানি যার নূন্যতম মজুরি ৮০০০ টাকা, তবে প্রশ্ন জাগে সে কিভাবে এই দ্রব্য মূল্যের সাথে মানিয়ে জীবনধারন করছে? এই ৮০০০ টাকা মজুরির মধ্যে ২০০০ টাকা বা এর বেশি ব্যয় হয় ঘর ভাড়া বাবদ। বাকি ৬০০০ টাকা দিয়ে সে নিজে খায়, বাচ্চাকে খাওয়ায়, বাবা মা থাকলে তাদের দিতে হয় আর অসুখ বিসুখ তো রয়েছেই দরিদ্র মানুষের নিত্য সঙ্গী! এই অল্প মজুরি দিয়ে ঠিকমত ভাত-ডালই যাদের কপালে জুটে না তাদের আবার আমরা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কথা বলি! পুষ্টিকর খাবার সেটাতো রীতিমত সোনার হরিণ এই দরিদ্র মানুষগুলোর কাছে। এই পুষ্টিহীনতা নিয়ে আমাদের দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী আগামীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এদের কর্মক্ষমতা অথবা কর্মদক্ষতা স্বাভাবিক ভাবেই কম থাকে।
এজন্য তাদের আয় কম থাকে। তাদের মূলধন নাই বিধায় বিনিয়োগও কম। যা তাদের চাহিদাকে সংকুচিত করে রাখে। আর এভাবে তারা যুগ যুগ ধরে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে।
শুধু নিম্নবিত্ত মানুষ যে এই অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে তা নয় যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ তারাও এই দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু এই শ্রেণির মানুষেরা অপুষ্টির সাথে সাথে লজ্জা ও ভয় নামক রোগেও ভোগে। তারা টি সি বি লাইনে দাঁড়াতে পারে না লজ্জায়। যেকোনো কাজও করতে পারে না আত্মসম্মানে বাধে। সুতরাং দিন দিন আমরা এক ভয়াবহ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অব্যাহত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজারে দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমদানিকৃত দ্রব্যের ওপর কর ও শুল্ক কমিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কৃষি ,খাদ্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী ধারাবাহিকভাবে নিশ্চিত করে যাচ্ছেন যে, দেশে প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। এত কিছুর পরেও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খাদ্য দ্রব্যের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ সরকার যা দাবি করছেন তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সরকারের দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা যেমন সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, তেমনি সাধারণ মানুষের সৎ মনোভাব ও সাহায্য ছাড়া সরকারের একার পক্ষেও সম্ভব নয়।
এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমাদের অপচয় রোধ করতে হবে। আমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ সর্বক্ষেত্রে এমন ভাবে অতিরিক্ত ব্যয় করছে যা দিয়ে অভাবী মানুষের চাহিদা পূরণ করা হয়তো সম্ভব হয়ে যেত। সে সম্পর্কে পবিত্র কুরআনুল কারিমে সতর্কতাপূর্বক ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ গ্রহণ করো। আর খাও ও পান করো। তবে অপচয় ও অসংযমতা করবে না।’ অপর আয়াতে অভাবগ্রস্তকে সহযোগিতার পাশাপাশি অপচয় রোধের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ গঠনের ইঙ্গিত রয়েছে। ‘আত্মীয় স্বজনকে তার হক দান করো এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপচয় করো না’।
কালোবাজারিরা বেশি লাভের আশায় দ্রব্যমূল্য মজুদদারি করায় সঙ্কট সৃষ্টি হয়। তাই এসব কালোবাজারি দেশের আইনানুযায়ী যেমন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, তেমনি ইসলামী আইনানুযায়ীও সে অভিশপ্ত।
আসমা আক্তার
সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
সিলেটের জমিন/বুধবার, ৩১ মে ২০২৩

এ জাতীয় আরো খবর

